আজ রুপার গায়ে হলুদ। কাল বিয়ে। রুপার
বাড়িতে বাজনা বাজছে।চারিদিকে শুধু কোলাহল আর হৈ চৈ।
রুপা প্রাইমারি গন্ডি পার হয়েছে তিন
বছর আগে। তার বান্ধবীদের
বেশি ভাগেরই বিয়ে হয়ে গেছে।
অনেক আগেই তার
বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গায়ে-
গতরে ছোটখাটো হওয়ার দরুণ তার
বিয়েটা একটু দেরিতে হচ্ছে।
অশিক্ষিত রুপার বাবা-মার
কথা মেয়ে গায়ে গতরে হলে বিয়ে দিতে হবে।
লেখাপড়া করে সে কি করবে?
গায়ে হলুদের দিন বিকালে রুপাকে গোসল
করানো হয়েছে। বিকাল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা।
রুপাকে সুন্দর
করে সাজিয়ে গুছিয়ে বসানো হয়েছে।
সবাই তাকে মিষ্টি মুখ করাবে।
প্রথমে রুপার মা রুপার
মুখে মিষ্টি তুলে দিতে যায়। কিন্তু
মিষ্টি তার মুখের কাছে নেওয়ার
সাথে সাথে সে বমি করতে শুরু করে।
তারপর আবার
মুখে মিষ্টি দিতে গেলে আবার
বমি করা শুরু করে।
বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায়।
পরে অবস্থা আরও খারাপ হলে ডাক্তার
ডাকা হয়। ডাক্তার সব কিছু
দেখে-শুনে, টেস্ট করে জানায়
রুপা মা হতে চলেছে। কথাটা শুনে রুপার
বাবা-মার
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। চিৎকার
করে কাঁদতে থাকে, আর বলে কে আমার মেয়ের
এত বড় সর্বনাশ করলো? বিয়ের
আগে মা হতে চলেছে বিষয়টি জানাজানি
হওয়ার
পর ভেঙ্গে যায়
তার বিয়ে।
চারিদিকে ছিঃ ছিঃ ছিঃ ধিক্কার
উঠে। পরদিন গ্রাম্য সালিশ ডাকা হয়।
রুপার
কাছে জানতে চাওয়া হয় কে এই অনাগত
সন্তানের বাবা? রুপা বলে তিন মাস
আগের ঘটনা। সে নানীর
বাড়িতে যাচ্ছিলো। তার নানীর
বাড়ি যাওয়ার পথে যে বিল আছে সেই
বিল পার হওয়ার সময় একজন যুবক
তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। নষ্ট
করে দেয় তার সতিত্ব।পাশবিক
নির্যাতন করে লেপন করে তার
শরীরে কালির দাগ। নষ্ট করে দেয় তার
ভবিষৎ। সেই
মানুষরূপী জানোয়ারকে সে সেদিনই
দেখে। তার আগে বা পরে কোনদিন
দেখেনি। কিন্তু বাসায়
এসে ভয়ে কাউকে কিছু
বলতে পারেনি। কারণ সেই লোক তাকে ভয় দেখিয়ে বলে, বাসায় যদি সে সব জানায় তবে তার বাবা-মাকে সে হত্যা করবে। বাবা-মা হারানোর ভয়ে সে চুপ ছিলো। রুপার কথাগুলো গ্রাম্য
সালিশে কেউ বিশ্বাস
করে না। সবাই বলে এই
মেয়ে চবিত্রহীনা। অনেক লোকের
সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক। তাই
সে কারও নাম
বলতে পারছে না। এমন মেয়ে সমাজে থাকলে সমাজ নষ্ট হবে।
সালিশে রুপাকে চরিত্রহীনা অপবাদ
দিয়ে একশত
বেত্রাঘাত করা হয়। তার বাবা-
মা কে এক ঘরে করে রাখা হয়। আর গ্রাম্য
মাতাব্বর নির্দেশ দেয় রুপার পেটের
সন্তানকে হত্যা করার। তারপর রুপার
বাবা-
মা অনেক ডাক্তারের
সাথে কথা বলে কিন্তু কোন ডাক্তার
Abortion করাতে রাজি হয় না। কারণ রুপার
বয়স মাত্র পনের আর তার ভাঙ্গা শরীর
তার উপরে আছে রক্ত সল্পতা। অযন্ত্র আর
অবহেলায় পার হতে থাকে রুপার জীবন।
দশমাস পর রুপা চাঁদের মত সুন্দর
একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। সন্তান
প্রসবের পর গ্রাম্য
প্রধান এসে নির্দেশ দেয় নিজের
বাচ্চাকে সে নিজে গলা টিপে হত্যা করবে।
কারণ সে খুব বড় অপরাধ করেছে। কিন্তু
কোন মা তার কলিজার
টুকরাকে হত্যা করতে পারে না। রুপাও
নিজের
বাচ্চাকে হত্যা করতে পারে না।
রুপা তার
কন্যাকে হত্যা করতে অস্বীকার
করলে তাকে এবং তার
কন্যাকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়।
নির্দেশ দেওয়া হয় সন্তানটি মৃত্যুর পূর্ব
পর্যন্ত তাদের
ঘরে আটকিয়ে রাখা হবে আর কোন
খাবার দেওয়া হবে না। প্রচন্ড ক্ষুধা আর
তৃষ্ণাতে তিন দিনের
ভিতরে কন্যা শিশুটি মারা যায়। রুপার
আর্তনাতে ভারি হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস।
কন্যার মৃত্যুর পর রুপাকে মুক্ত
করে দেওয়া হয়। মুক্ত করে রুপাকে খাবার
দেওয়া হয়। প্রচন্ড ক্ষুধা,তৃষ্ণা ও শোকে রুপা জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।
খাবার দেখে রুপা জোরে জোরে সব খাবার এক বারে মুখে তুলে নিতে থাকে। কারণ বাচ্চা প্রসবের পর মায়েদের ক্ষুধা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আর রুপা কয়েকদিন খাবার চোখে দেখে নি। ক্ষুধা এবং শোকে জোরে জোরে খেতে গিয়ে গলায় খাবার বেধে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রুপা।
ঝরে যায় রুপা নামক নিষ্পাপ ফুলটি।
বিনা অপরাধে অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ
করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় রুপা। কিন্তু যেই
মানুষরূপী জানোয়াটা সব অপরাধ
করলো সে থেকে যায় ধরা ছুঁয়ার
বাহিরে।।
Post a Comment
Post a Comment